মঙ্গলবার ২১ অক্টোবর ২০২৫ - ১১:২৫
সময়মতো নামাজ পড়ো, যাতে শয়তান তোমাকে ভয় পায়

ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাজধানী তেহরানের হাওজায়ে ইলমিয়ার আখলাক ও নৈতিকতা বিষয় বিশিষ্ট উস্তাদ আয়াতুল্লাহ জাভাদান নামাজের প্রথম ওয়াক্তে (আওয়াল ওয়াক্তে) আদায়ের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বলেছেন, সময়মতো নামাজ পড়াই হচ্ছে নৈতিক স্থিতি, তাকওয়া এবং প্রকৃত সৌভাগ্যের মূল চাবিকাঠি।

হাওজা নিউজ এজেন্সি’র সঙ্গে “তাকওয়া ও সৌভাগ্যের পথে পৌঁছানোর উপায়” শীর্ষক সাক্ষাৎকারে আয়াতুল্লাহ জাভাদান বলেন, “যারা আল্লাহর পথে চলা শুরু করতে চান, তাদের জন্য আমার প্রথম পরামর্শ—যা পূর্বসূরি মহান আলেম ও নৈতিক শিক্ষকদের তরুণদের প্রতি বারবার প্রদত্ত নসিহত—হলো আওয়াল ওয়াক্তে নামাজ পড়া।”

তিনি বলেন, “সময়মতো নামাজ পড়ুন। সম্ভব হলে জামাতে পড়ুন, আর যদি না পারেন, একা হলেও প্রথম সময়ে নামাজ আদায় করুন। বিশেষ করে আজকের তরুণদের জন্য এটি কঠিন মনে হতে পারে—কারণ শীতকালে ফজরের আজান খুব ভোরে হয়, ঘুম থেকে ওঠা কঠিন হতে পারে। তবে কোনো সমস্যা নেই। আজ না পারলে আগামীকাল চেষ্টা করুন, পরশু আরও ভালো পরিকল্পনা করুন এবং প্রতিদিনের চেষ্টায় নামাজকে প্রথম সময়ে আদায় করার অভ্যাস তৈরি করুন।”

আয়াতুল্লাহ জাভাদান আরও বলেন, “আমাদের উচিত এমনভাবে পরিকল্পনা করা, যাতে প্রতিটি নামাজ প্রথম সময়ে আদায় করা যায়। বিশেষ করে ফজরের নামাজ—যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রথম সময়ে আদায় করা সবচেয়ে কঠিন—তার জন্য বিশেষ পরিকল্পনা রাখা জরুরি।”

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “ধরা যাক, কোনো ছাত্র যোহরের নামাজের সময় ক্লাসে আছে। আমরা বলি না যে ক্লাস পরিত্যাগ করে আসুক; বরং ক্লাস শেষ হবার সঙ্গে সঙ্গে—যেমন দুপুর দুইটায় ক্লাস শেষ হলে—তৎক্ষণাৎ নামাজ পড়ুক। খাওয়া বা বিশ্রাম পরে করা যাবে। অন্তত ওজু করে সাথে সাথে নামাজ আদায় করা উচিত। এভাবে নামাজের প্রথম সময়টা যতটা সম্ভব রক্ষা করতে হবে।”

আয়াতুল্লাহ জাভাদান হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “যে ব্যক্তি তার নামাজ আওয়াল ওয়াক্তে পড়ে এবং তা (অভ্যাস) রক্ষা করে, শয়তান সর্বদা তার থেকে ভীত থাকে। হাদীসে এসেছে:
«لایَزالُ الشّیطانُ زائِلاً مِن بَنی ‌آدم» — অর্থাৎ, শয়তান এমন মানুষের কাছ থেকে সর্বদা দূরে সরে যায়।”

তিনি বলেন, “নামাজ শুধুমাত্র সময়মতো পড়লেই হবে না, তা সঠিকভাবে পড়াও জরুরি। এজন্য রুকু, সেজদা, কিরআত, ওজু, গোসল—সব কিছু সঠিকভাবে শেখা দরকার। এতে হয়তো তিন-চার ঘণ্টা সময় লাগবে, কিন্তু এটি আজীবনের নামাজকে সঠিক ও শক্তিশালী করে।”

আয়াতুল্লাহ জাভাদান আরও বলেন, “সঠিক নামাজের জন্য সঠিক তাকলিদ (বিশেষজ্ঞ ধর্মীয় ব্যক্তি) অনুসরণ) প্রয়োজন। অর্থাৎ প্রশ্ন করে শেখা এবং তা অনুযায়ী কার্যকরভাবে অনুশীলন। উদাহরণস্বরূপ, ওজু শিখতে দু’পাতা, গোসল শিখতে দু’পাতা, নামাজের মূল অংশগুলো শিখতে সাত-আট বা দশ পৃষ্ঠা। তরুণরা দ্রুত শেখে, তাই দুই-তিনবার শিক্ষক বা আলেমের কাছে পড়ে শুদ্ধ করা যায়।”

তিনি বলেন, “যুবক যখন তার নামাজ সঠিকভাবে ও মনোযোগ সহকারে পড়ে এবং সবসময় আওয়াল ওয়াক্তে নামাজ আদায় করে, তখন শয়তান তার থেকে ভীত হয়। এমন যুবক শয়তানকে ভয় পায় না; বরং শয়তানই তার থেকে ভীত হয়। যদি নামাজ অবহেলিত হয়, শয়তান ধীরে ধীরে তাকে এমন পথে নিয়ে যায়, যেখান থেকে ফেরার পথ থাকে না।”

আয়াতুল্লাহ জাভাদান বলেন, “যে ব্যক্তি সবসময় নিরাপদ ও স্থিতিশীল থাকতে চায়, তার উচিত আওয়াল ওয়াক্তে নামাজ পড়া। এটি আল্লাহভীতির অনুভূতি সৃষ্টি করে এবং হৃদয়ে শান্তি আনে। অনেক তরুণ নামাজ খুব দ্রুত পড়ে—দুই মিনিটে শেষ করে। সঠিক হলো, পাঁচ মিনিটের মধ্যে শান্তভাবে, সঠিক উচ্চারণ ও মনোযোগ সহ নামাজ পড়া।”

তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, “‘সুবহানা র’ব্বিয়াল আযিমি ওয়া বিহামদিহ’—এটি ধীরে, শান্তভাবে ও যথাযথ উচ্চারণে পড়। নামাজ সঠিকভাবে পড়া মানে হলো, তুমি যেন এক দৃঢ় প্রাচীরের সঙ্গে নিজের আত্মাকে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়েছ। পৃথিবীর ঝড়ও আসুক, তুমি পড়বে না। গুরুত্বপূর্ণ বিপদ বা ঘটনা ঘটলেও, আওয়াল ওয়াক্তে ও সঠিক নামাজ তোমাকে স্থিতিশীল রাখে।”

আয়াতুল্লাহ জাভাদান পরামর্শ দেন, দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তাওয়াসসুল (আধ্যাত্মিক সংযোগ)। তিনি বলেন, “তাওয়াসসুল মানে আনুষ্ঠানিক নয়। যখন তুমি ঘরে একা বসে ইমাম মাহদী (আ.ফা.) বা ইমাম হোসাইন (আ.) এর সঙ্গে হৃদয় থেকে কথা বলো—তাতেই প্রকৃত তাওয়াসসুল হয়। পাঁচ মিনিট বা দুই মিনিটের মধ্যে একান্তিক আলোচনা সত্যিকারের মনোযোগ ও সমঝোতা সৃষ্টি করে।”

তিনি আরও বলেন, “মজলিস বা মাতমে যদি এমন মুহূর্ত আসে, যেখানে তুমি একান্ত হৃদয় থেকে আল্লাহ ও আহলে বাইতের সঙ্গে যুক্ত হও, তখন সেই মুহূর্ত অমূল্য। এ সময়ের চোখের জল শুধুমাত্র আবেগ নয়, বরং ঈমানের পরিশুদ্ধ প্রকাশ।”

আপনার কমেন্ট

You are replying to: .
captcha